শেরপুর জেলার ভৌগলিক অবস্থান


শেরপুর জেলা পূর্ব পশ্চিমে ৮৯- ৫০ পূর্ব দ্রাঘিমা হতে ৯০- ১৫ পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যমত্ম। উত্তর দক্ষিণে ২৪- ৫৫ উত্তর অক্ষাংশ হতে ২৫- ১৬ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত। অধিবাসীদের মধ্যে মুসলমান এবং হিন্দুই প্রধান। তাছাড়া পাহাড়ী জনপদে আদিবাসী, গারো, খ্রিষ্টানও রয়েছে
নদী-খাল-বিল পাহাড় জঙ্গঁলে ঘেরা শেরপুর এক সময় স্বাভাবিক প্রাকৃতিক সীমার মধ্যে স্বাতন্ত্র্য লাভ করেছিল। আকাশ খুব পরিষ্কার থাকলে শহর থেকেই উত্তর আকাশে গাঢ় নীল রঙে আকা পাহাড়ের রেখা দেখা যেতো। এখনও শহর থেকে বের হয়ে উত্তর সীমামেত্ম অগ্রসর হতে থাকলে আকাশে পাহাড়ের গাড় নীল আবছায়া স্পষ্ট হতে থাকে। সেটাই গাড়োপাহাড়

একদা শেরপুরের উত্তর উত্তর পূর্বের পাহাড়ী অঞ্চল ব্যতিরেকে সবটাই ছিল গভীর জঙ্গঁলে ঘেরা জলভূমি আর চরভূমি। ব্রহ্মপুত্র নদ বারবার তার গতি পরিবর্তন করে নতুন নতুন চর তৈরী করে শেরপুরের ভূ-প্রকৃতিকে পাল্টে দিয়েছে। এইসব চরভূমিগুলি ধীরে ধীরে বসতি অঞ্চল হয়ে শেরপুর পরগণার মধ্য, দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের জনবহুল গ্রাম শহর তৈরি করেছে। মোঘল আমলে চর-খাল বিলে পরিপূর্ণ অঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র তখন এত চওড়া খরস্রোতা ছিলো যে, সেই নদী পার হয়ে শেরপুর পৌঁছতে সময় লাগতো এক প্রহর বা তিন ঘন্টারও ওপর। আর এই নদী পারাপারের মাশুল ছিল দশ কাহন বা কড়ি। পুরনো দলিল দসত্মাবেজে তাই এর উলেখ পাওয়া যায় দশকাহনিয়া বাজু (বিভাগ) হিসেবে

মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় ব্রহ্মপুত্র নদ জামালপুর থেকে শেরপুরের শেরী নদী পর্যমত্ম বিস্তৃত ছিল। প্রাকৃতিক নিয়মেই ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ সরে যায় দক্ষিণের দিকে। কালক্রমে ব্রহ্মপুত্রের বুকে চর পড়ে লছমনপুর, চরপাড়া, চরশেরপুর, মুচারচর, বয়রা, শীতলপুরসহ অনেকগুলো জনপদ ব্রহ্মপুত্র তথা শেরী নদীর বুকে আত্মপ্রকাশ করে। শেরপুরের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তের মৃগী নদী ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকারূপে প্রসারিত ছিলো পরবর্তীকালের ইচলি বিল এই অববাহিকারই স্তব্ধ ভগ্নাংশ। বর্তমানে চর এলাকার কোন কোনটির নামের পরিবর্তন ঘটেছে। পুরনো নাম হারিয়ে যাচ্ছে। যেমন শহরের নবীনচরের নাম হয়েছে নবীনগর। চরশেরপুর, চরপক্ষীমারী, লছমনপুর, জঙ্গলদী বুহ্মপুত্রের এসব চরভূমি প্রায় বছরের পুরনো। শেরপুরের উত্তরাংশে ছিল দুর্গম পার্বত্য অরণ্য অঞ্চল। পাহাড়ী এসব উপত্যকায় ছিলো আদিবাসী কোচ, গারো, হাজং, রাজবংশি, হদি, বানাই, বর্মনদের বাস। বন্যহাতি, বনমহিষ, বাঘ, ভলyকসহ নানা হিংস্র সব জীবজন্তুর আবাস ছিলো এসব অরণ্যরাজীতে। খ্রীষ্টিয় চতুর্দশ শতাব্দিতে শেরপুরের উত্তর উত্তর পূর্বাঞ্চলে আদিবাসী সামন্তর পৃথক রাজত্ব কায়েম করেছিলো। গড়জড়িপা ছিলো তার অন্যতম। পঞ্চদশ শতাব্দির শেষভাগে সেসব সামমত্মরাজের অবসান ঘটে

বর্তমানে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী নালিতাবাড়ী উপজেলার ৪২ কি.মি, দীর্ঘ ভারত সীমান্তজুড়ে গাড়োপাহাড়ের অবস্থান। লালমাটি আর পাথরের উঁচু-নীচু টিলার প্রাকৃতিক শাল-গজারীর পাশপাশি একাশি, মিনজিরাম, কড়ই, সেগুন, মেহগিনীর বনবাগান সৃজন করা হয়েছে

No comments:

Post a Comment